Khulna City Guidance

খুলনা শহর: ইতিহাস, ঐতিহ্য ও আধুনিক পথনির্দেশনা
খুলনা, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত একটি ঐতিহ্যবাহী ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর। এটি খুলনা বিভাগের প্রধান শহর এবং খুলনা জেলার সদরদপ্তর। গঙ্গা-মাতলা নদী প্রবাহিত এই জনপদটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং বহুমুখী আর্থ-সামাজিক কার্যক্রমের জন্য পরিচিত। খুলনা শহর বিশেষভাবে বিখ্যাত সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার হিসেবে, যা বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন এবং ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য।
ঐতিহাসিক পটভূমি ও গঠন
খুলনার ইতিহাস বহু প্রাচীন। প্রাচীন বাংলার “বঙ্গ” অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত এই শহর মুঘল আমলে “জালালাবাদ” নামে পরিচিত ছিল। ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৮৪ সালে এটি পৌরসভা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে সিটি করপোরেশনে রূপান্তরিত হয়। ঐতিহাসিকভাবে খুলনা ছিল একটি নদী-কেন্দ্রিক বাণিজ্য নগরী, যেখানে নদীপথে চাল, লবণ, কাঠ ও মশলার ব্যবসা চলত। এখানে একসময় খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলস, খুলনা শিপইয়ার্ড, ও খুলনা হার্ডবোর্ড মিলসের মতো রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠান ছিল, যা একসময়ে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক ধারা
খুলনার ঐতিহ্য শুধু শিল্পে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এ অঞ্চল সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বহন করে। এখানকার লোকসংস্কৃতি, গানের ধারা (যেমনঃ ভাটিয়ালি ও বাউল), পুঁথিপাঠ ও পটচিত্র একে একটি স্বতন্ত্র সংস্কৃতির শহরে পরিণত করেছে। ঐতিহাসিক স্থানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ
- শতদল-ষাটগম্বুজ মসজিদ (বাগেরহাট) – ১৫শ শতকে খানজাহান আলী নির্মিত এই মসজিদ ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের অন্তর্ভুক্ত।
 - সুন্দরবনের করমজল ও হিরণ পয়েন্ট – রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও চিত্রা হরিণের আবাসস্থল।
 - রূপসা নদী ও রূপসা সেতু – খুলনার প্রাণস্বরূপ এই নদী বাণিজ্য ও পরিবহনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
 - খুলনা মিউজিয়াম ও আর্ট গ্যালারি – এখানকার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও নৌ-সংস্কৃতির নিদর্শন সংরক্ষিত আছে।
 
বর্তমান অবস্থা ও শহর গাইড
বর্তমানে খুলনা একটি আধুনিক শহরে পরিণত হয়েছে যেখানে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি খাতে দ্রুত উন্নয়ন ঘটছে। উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানসমূহ হলো:
- খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ও খুলনা মেডিকেল কলেজ – এগুলো দেশের উচ্চশিক্ষার কেন্দ্র।
 - শেখ আবু নাসের হাসপাতাল, গাজী মেডিকেল, ও সিটি মেডিকেল সার্ভিসেস – আধুনিক চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান।
 - সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল ও খুলনা রেল স্টেশন – যোগাযোগ ব্যবস্থার মেরুদণ্ড।
 
পর্যটকদের জন্য খুলনা এক অভাবনীয় গন্তব্য। শহর থেকে সরাসরি মংলা বন্দরের দিকে গিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া ষাটগম্বুজ মসজিদ, খানজাহান আলীর মাজার, এবং শিববাড়ি মন্দির ঘুরে দেখার মতো দর্শনীয় স্থান।
পর্যটন ও ভ্রমণ নির্দেশনা
- যেভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে খুলনা যেতে সড়কপথে (দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া বা গোপালগঞ্জ হয়ে), রেলপথে (সুন্দরবন এক্সপ্রেস, চিত্রা এক্সপ্রেস) অথবা আকাশপথে (ঢাকা-জেসোর ফ্লাইট, সেখান থেকে খুলনা) যাওয়া যায়।
 - থাকার জায়গা: খুলনা শহরে রয়েছে হোটেল সিটি ইন, হোটেল ক্যাসল সালাম, হোটেল টাইগার গার্ডেন ইত্যাদি আন্তর্জাতিক মানের আবাসন ব্যবস্থা।
 - খাবার ও কৃষ্টি: খুলনার ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে রয়েছে চিংড়ি মালাইকারি, পদ্মার ইলিশ, ও ‘মিষ্টি সুপারির পান’। শহরের বিখ্যাত খাবার রেস্টুরেন্টগুলোর মধ্যে আছে “খুলনা ক্যাফে”, “ইলিশ রিভারভিউ”, ও “স্বাদ”।
 
তথ্যসূত্রঃ
খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় – www.khulna.gov.bd
খুলনা সিটি করপোরেশন – www.khulnacity.gov.bd
বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন – www.bangladesh.gov.bd
উইকিপিডিয়া (বাংলা) – https://bn.wikipedia.org/wiki/খুলনা
খুলনা ট্যুরিজম – www.tourismboard.gov.bd
